ক্লাউড কম্পিউটিং হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে রিসোর্স, স্টোরেজ, সার্ভার, ডাটাবেস, নেটওয়ার্কিং, সফটওয়্যার এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সেবা প্রদান করার একটি মডেল। সহজ কথায়, ক্লাউড কম্পিউটিং হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিষেবা সরবরাহ করা, যেখানে ব্যবহারকারী তার প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা গ্রহণ করতে পারে এবং ব্যবহার করার পর শুধুমাত্র সে পরিমাণ অর্থ প্রদান করে যতটা সে ব্যবহার করেছে। ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সরাসরি ইন্টারনেট থেকে রিসোর্স ও সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারে, ফলে নিজস্ব হার্ডওয়্যার বা ইনফ্রাস্ট্রাকচার পরিচালনার প্রয়োজন হয় না।
অন-ডিমান্ড সেলফ-সার্ভিস: ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা গ্রহণ করতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে রিসোর্স স্কেল করতে পারে।
ব্রড নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস: ক্লাউড সেবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ব্যবহার করা যায়, যা ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, স্মার্টফোন, এবং ট্যাবলেটের মতো ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেস করা যায়।
রিসোর্স পুলিং: ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে একটি বড় সংখ্যক ব্যবহারকারী একই সময়ে রিসোর্স শেয়ার করতে পারে, যেখানে রিসোর্সগুলির অবস্থান নির্দিষ্ট হয় না, বরং একাধিক ব্যবহারকারী একত্রে রিসোর্স ব্যবহার করতে পারে।
র্যাপিড এলাস্টিসিটি: ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে রিসোর্স সহজেই স্কেল করা যায়, অর্থাৎ প্রয়োজনের সময় বাড়ানো এবং প্রয়োজন কমে গেলে কমিয়ে ফেলা যায়।
মাপার যোগ্য সার্ভিস: ক্লাউড সেবা ব্যবহারকারী কতটুকু সেবা গ্রহণ করেছে তা পরিমাপ করা সম্ভব এবং সে অনুযায়ী চার্জ প্রদান করতে হয়।
IaaS (Infrastructure as a Service): IaaS মডেলে, ক্লাউড সরবরাহকারী ইনফ্রাস্ট্রাকচার যেমন ভার্চুয়াল মেশিন, স্টোরেজ, নেটওয়ার্কিং এবং ডেটা প্রসেসিং ক্ষমতা সরবরাহ করে। উদাহরণস্বরূপ, Amazon Web Services (AWS), Google Cloud Platform (GCP), এবং Microsoft Azure।
PaaS (Platform as a Service): PaaS মডেলে, সরবরাহকারী অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে, যেখানে ব্যবহারকারীরা হার্ডওয়্যার এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার পরিচালনার পরিবর্তে শুধুমাত্র অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ এবং রক্ষণাবেক্ষণের উপর মনোযোগ দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, Google App Engine, Microsoft Azure App Service।
SaaS (Software as a Service): SaaS মডেলে, ব্যবহারকারীরা সফটওয়্যার সরাসরি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারে, যেখানে ইনস্টলেশন বা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, Google Workspace, Microsoft Office 365, Salesforce।
পাবলিক ক্লাউড: পাবলিক ক্লাউড হলো এমন ক্লাউড সেবা, যা তৃতীয় পক্ষ সরবরাহকারী দ্বারা পরিচালিত হয় এবং এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত। উদাহরণ: AWS, Microsoft Azure, Google Cloud।
প্রাইভেট ক্লাউড: প্রাইভেট ক্লাউড একটি একক সংস্থা বা সংস্থার জন্য ডিজাইন করা হয় এবং এটি এক্সক্লুসিভলি সেই সংস্থার দ্বারা ব্যবহৃত হয়। প্রাইভেট ক্লাউড সাধারণত সংস্থার নিজস্ব ইনফ্রাস্ট্রাকচারে হোস্ট করা হয়।
হাইব্রিড ক্লাউড: হাইব্রিড ক্লাউড হলো একটি মডেল যেখানে পাবলিক এবং প্রাইভেট ক্লাউড সেবা একত্রে ব্যবহার করা হয়। হাইব্রিড ক্লাউড সিস্টেমে উভয় ধরণের ক্লাউড সুবিধা গ্রহণ করা যায়।
মাল্টি ক্লাউড: মাল্টি ক্লাউড মডেলে একাধিক ক্লাউড সেবার সমন্বয় থাকে, যা বিভিন্ন ভেন্ডরের ক্লাউড পরিষেবা একত্রে ব্যবহার করা হয়।
লাগাতার ব্যয় হ্রাস: ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলি নিজেদের ডেটা সেন্টার পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমাতে পারে। ব্যবহারকারী শুধুমাত্র ব্যবহৃত রিসোর্সের জন্য অর্থ প্রদান করে।
স্কেলেবিলিটি এবং নমনীয়তা: ক্লাউড সেবা প্রয়োজন অনুযায়ী সহজেই স্কেল করা যায়। ব্যবহারকারী যখন ইচ্ছা রিসোর্স বাড়াতে বা কমাতে পারে, ফলে ব্যয়েরও নিয়ন্ত্রণ থাকে।
মোবিলিটি: ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা যে কোনো জায়গা থেকে রিসোর্স অ্যাক্সেস করতে পারে, ফলে কাজের স্থানের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পায়।
ব্যাকআপ এবং রিকভারি: ক্লাউড পরিষেবাগুলি সাধারণত স্বয়ংক্রিয় ব্যাকআপ এবং ডেটা রিকভারি প্রদান করে, যা ডেটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
অটোমেটেড আপডেট: ক্লাউড সেবা প্রদানকারীরা সাধারণত সার্ভার এবং অ্যাপ্লিকেশনের অটোমেটেড আপডেট এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক।
নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা: ক্লাউড কম্পিউটিং এ ডেটা তৃতীয় পক্ষের সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়, যা অনেক সময় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
ইন্টারনেট নির্ভরতা: ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করতে ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন, ফলে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যতীত রিসোর্স অ্যাক্সেস করা সম্ভব নয়।
পরিবর্তনশীল খরচ: যদিও ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহারে খরচ কম থাকে, তবে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ক্ষেত্রে খরচ বেশি হতে পারে।
মাইগ্রেশন জটিলতা: এক ক্লাউড থেকে অন্য ক্লাউড বা অন-প্রিমিসেস সিস্টেমে মাইগ্রেশন জটিল হতে পারে এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
ব্যবসায়িক অ্যাপ্লিকেশন: কোম্পানিগুলি ক্লাউডের মাধ্যমে সহজেই ব্যবসায়িক অ্যাপ্লিকেশন যেমন CRM, ERP ইত্যাদি পরিচালনা করতে পারে।
বড় ডেটা এবং ডেটা এনালাইটিক্স: ক্লাউডের মাধ্যমে কোম্পানিগুলি বড় আকারের ডেটা এনালাইটিক্স প্রক্রিয়া করতে পারে।
স্টোরেজ এবং ব্যাকআপ: ক্লাউড সেবা বৃহত্তর ডেটা সংরক্ষণ এবং ব্যাকআপ সমাধান প্রদান করে।
ওয়েব হোস্টিং: ওয়েবসাইট হোস্টিং এবং সার্ভারের জন্য ক্লাউড সেবা ব্যবহার করা হয়।
ক্লাউড কম্পিউটিং হলো বর্তমান সময়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, যা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ সহজ এবং আরও কার্যকর করে তুলেছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার, সফটওয়্যার এবং রিসোর্স ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সুবিধা পাচ্ছে। স্কেলেবিলিটি, খরচের সাশ্রয়, এবং সহজ ব্যবস্থাপনার কারণে ক্লাউড কম্পিউটিং দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।